করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন নেয়া প্রসঙ্গে ইসলাম যা বলে

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২১ | আপডেট: ৬:৪৩:অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২১

ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষ অসুস্থ হলে যাতে চিকিৎসা গ্রহণ করে সে ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সা.) অনুসারীদের উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন।

রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, সেটি হলো বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ)

টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণ মুলত সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের উপায়। রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ থাকতে ইসলামে চিকিৎসা গ্রহণ ও ভ্যাকসিন নেয়ার অনুমতি রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দিকনির্দেশনা থেকেই তা প্রমাণিত।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘মৃত্যু ছাড়া এমন কোনো রোগ নেই; যার চিকিৎসা নেই।’

টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণ মুলত রোগ প্রতিরোধের একটি অন্যতম উপায়। জটিল-কঠিন মহামারি ও রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ থাকার জন্য রোগের ধরণ অনুযায়ী টিকা-ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। সুস্থতার জন্য এসব টিকা গ্রহণে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী এই নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের ধারণা পোষণ করেন।

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুর আগে সুস্থতার জন্য চিকিৎসা গ্রহণে ইসলামে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হলে নিজে চিকিৎসা নিতেন এবং অন্যদেরকেও চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত।

১. হিজামা
রাসূলুল্লাহ (সা.) চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, নিজেও চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বুখারিতে এসেছে-
‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাথা ব্যথা হয়েছিল। তিনি আবু তাইয়্যেবা নামে একজনকে ডেকে নিজের মাথা হিজামা করিয়েছিলেন। হিজামার বিনিময়ে তিনি তাকে দিনার অথবা খাদ্য সামগ্রী দিয়েছিলেন।’

২. কায়ী বা থেরাপি
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনে কায়ী করার বর্ণনা পাওয়া যায়। কায়ী বলা হয় লোহা জাতীয় বস্তু গরম করে ব্যথার জায়গায় সেক দেওয়া। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে থেরাপি বলা হয়।

৩. লুদুদ বা দপ দেওয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) জ্বর থকে সুস্থ থাকার জন্য লুদুদ বা নামে দপ নিয়েছিলেন। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর থেকে সুস্থতায় তিনি উম্মাহাতুল মুমিনীনদের বলেছিলেন তাকে লুদুদ করাতে। লুদুদ বলা হয় নাকে দপ দেওয়া।

৪. স্বচ্ছ পানিতে গোসল
হাদিসের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হলে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এ মর্মে দিকনির্দেশনা দেন যে, ‘আমাকে একটা বরতনে (চিনা মাটির পাত্রে) বসাবে এরপর ৭ পুকুর থেকে স্বচ্ছ পানি নিয়ে এসে তা আমার শরীরে ঢালবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী এমনই করেছিলেন। এর মাধ্যমে নবীজি (সা.) সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

রোগ-মুক্তিতে এগুলো ছিল তিব্বুন নববি বা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুস্থ হয়ে ওঠার বাস্তব চিত্র। সুস্থ থাকতে হাদিসের এসব দিকনির্দেশনাই প্রমাণ করে যে, রোগ মুক্তি কিংবা রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তৈরি যে কোনো ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা গ্রহণ করা বৈধ।

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) চিকিৎসা গ্রহণে মুখে আদেশ করেছেন এবং নিজের জীবনেও চিকিৎসা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

সুতরাং বর্তমান যুগে মহামারি করোনাসহ যাবতীয় রোগ ও রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনো বাধা নেই। বরং সুস্থ থাকতে টিকা-ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা গ্রহণ সরাসরি সুন্নাতের রাসূলের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।

এ মানসিকতা পরিহার করা জরুরি যে-
‘ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ভ্যাকসিন নেয়ায় উপকার কী? না; কোনোভাবে এ মানসিকতা পোষণ করা যাবে না। আবার ভ্যাকসিন নিলে তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে কিংবা ভ্যাকসিন-এর মাধ্যমে শরীরে কি প্রবেশ করানো হচ্ছে তা বুঝা সম্ভব নয় ইত্যাদি অজুহাত দাঁড় করানো কোনোভাবেই ঠিক নয়।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনসহ যে কোনো রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ করে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিজ্ঞাপন
Add Custom Banar 2
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

Medical add