
মেঘলা নিউজি ডেস্ক: রাশিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তালেবান নেতারা । আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তিন সপ্তাহ হতে যাচ্ছে। এখনো নতুন সরকার ঘোষণা করেনি তারা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার গঠনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আজ শুক্রবার তালেবানের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হতে পারে। আগেই অবশ্য চারজন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে পানশিরে গতকাল তালেবান ও প্রতিরোধযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছে। অন্যদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যেই কাজের অধিকারের দাবিতে হেরাতে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা।
তালেবান বাহিনী গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধের। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় তালেবানের।
তালেবানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আজ পবিত্র জুমার নামাজের পর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার ঘোষণা আসতে পারে। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, সরকার ঘোষণা নিয়ে তালেবানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখনো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার ঘোষণার দিনক্ষণ তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারবেন না। তবে এটা মাত্র কয়েক দিনের বিষয়। এদিকে তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা আহমাদুল্লাহ মুত্তাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জমকালো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তালেবানের সরকার কেমন হবে, তার অবশ্য একটি ধারণা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এসেছে। সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার হাতেই থাকবে সর্বময় ক্ষমতা। তাঁর অধীনে কাজ করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে তালেবান জানিয়েছে, তিনি এখন কান্দাহারে আছেন। গত বুধবার কান্দাহারে তালেবানের সশস্ত্র কুচকাওয়াজে তাঁর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে তিনি হাজির হননি। ওই কুচকাওয়াজে আফগান বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মার্কিন সাঁজোয়া যানসহ অনেক সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়।
তালেবানের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন আখুন্দজাদার তিন ডেপুটি। তাঁদের একজন মোল্লা ইয়াকুব। তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। আরেক ডেপুটি সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকেও মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে আছেন তিনি। এ ছাড়া তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।
আর আগেই ঘোষিত চার মন্ত্রী হলেন অর্থমন্ত্রী গুল আগা, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদর ইব্রাহিম, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা আবদুল কাইয়ুম জাকির ও ভারপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি।
তালেবান ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করবে। আফগানিস্তানের জনগণসহ সারা বিশ্বের নজর এখন তালেবানের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার কেমন হয়, সেদিকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকার যেমনই হোক, নতুন এই সরকারের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে অর্থসংকট প্রকট হতে শুরু করেছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এটিএম বুথের সামনে মানুষজনের সারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও সংবাদ হয়েছে।
পানশিরে তুমুল লড়াই । তালেবান সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিলেও পানশির উপত্যকায় প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় নেতা আহমেদ মাসুদ। গতকাল তাঁর বাহিনীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই পানশির জয় করা কঠিন। উঁচু পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকার যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে তেমন কাজ না–ও হতে পারে—এমনটা তালেবানেরও জানা। এ জন্য তারা পানশিরের প্রতিরোধযোদ্ধাদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সে আলোচনা শুরুতে ভেস্তে গেছে।
রয়টার্স জানায়, গতকাল লড়াই চলাকালেই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, তাঁদের যোদ্ধারা পানশিরে প্রবেশ করেছেন এবং কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। অভিযানে বিপরীত পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে পানশিরের ওই প্রতিরোধযোদ্ধাদের সংগঠন ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তানের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, তালেবান এই উপত্যকায় ঢুকতেই পারেনি। তিনি বলেন, ‘শত্রুরা জাবুল-সরজের (পার্শ্ববর্তী পারওয়ান প্রদেশ) দিক দিয়ে শোতুলে ঢুকতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিরোধযুদ্ধে শত্রুপক্ষের অনেকেই নিহত হয়েছে।’
হেরাতে নারীদের বিক্ষোভ । তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই বিবিসি পশতুকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তালেবান শাসনামলে নারীরা আফগানিস্তানে কাজ করতে পারবেন। তবে মন্ত্রিসভায় কিংবা সরকারের উচ্চপর্যায়ে হয়তো নারীদের উপস্থিতি থাকবে না।
আব্বাস স্তানিকজাইয়ের ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরপরই পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে গতকাল বিক্ষোভ করেন নারীরা। ঘটনাস্থল থেকে এএফপির এক সাংবাদিক বলেন, বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘শিক্ষা, কাজ ও নিরাপত্তা আমাদের অধিকার’, ‘আমরা ভীত নই, আমরা একতাবদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।