
মেঘলা নিউজ ডেস্ক: আসন্ন কলমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করলে ও কথা বললে এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-১ আসনের (গোদাগাড়ী-তানোর) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে দরগাডাঙ্গা স্কুল ও কলেজ মাঠে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ হুমকি দেন বলে অভিযোগ।
একটি ভিডিও ফুটেজে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গেছে, ‘(কলমা ইউনিয়নের) প্রতিটি গ্রামে গিয়ে বলে দিবেন যে, কেউ নৌকার বিরুদ্ধে কথা বললে এবং নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করলে, কলমার মাটিতে তার স্থান হবে না’।
সংসদ সদস্যের ওই বক্তব্যের ফুটেজ গত ২ দিনে মেসেঞ্জার ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন, উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে খারাপ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধিমালায় এসব কথা বলা নিষিদ্ধ। যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী বক্তব্য আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
‘আমি জেলহত্যা দিবস নিয়েই কথা বলছিলাম, কিন্তু কদিন পরেই নির্বাচন ছিল, তাই জনগণ আমার কাছ থেকে শুনতে চেয়েছিল আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আছি কি না। আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম এবং তখন এ শব্দগুলো আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,’ যোগ করেন তিনি।
এমন বক্তব্যের জন্যে অনুতপ্ত কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি জনসভায় আমার মনের কথা খুলে বলতে না পারি, তাহলে রাজনীতি করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। রাজনীতিবিদের কথায় রাজনীতির বিষয়টি চলে আসবেই।’
তিনি দাবি করেন, অন্য রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লেও তিনি কোনো দুর্নীতিতে না জড়িয়ে শুধু রাজনীতি করছেন। সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী এই সংবাদদাতার কাছে প্রশ্ন করেন, ‘আমি কী কথাও বলতে পারব না।’ আগামী ১১ নভেম্বর রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়ন পরিষদসহ আরও ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাইনুল ইসলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. খাদেমুন নবী চৌধুরী।
সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী তার বক্তব্যে নবী চৌধুরীকে ‘বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর ও মোশতাক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত এখনো অব্যাহত আছে। তার উচিত নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া এবং নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করা।’
নবী চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর নতুন সূর্য উঠবে, কিন্তু এই সূর্য তোমার আকাশে উঠবে না।’ তিনি নবী চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করবেন, অথচ শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত আপনি মানবেন না, আপনি এত বড় বাঘের বাচ্চা হতে পারবেন না, আমরা আপনাকে বিড়াল বানিয়ে দেব।’
এ ঘটনার পর নবী চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার চেয়েছেন। তিনি তার অভিযোগের সঙ্গে সংসদ সদস্যর বক্তব্যর ভিডিও ফুটেজের একটি কমপ্যাক্ট ডিস্কও সংযুক্ত করেছেন।
এসব হুমকি নিয়ে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, বক্তব্যে তিনি কারো জীবনের ওপর কোনো হুমকি দেননি। ‘আমি বলতে চাইছিলাম যে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা নির্বাচনে পরাজিত হবে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে এবং আমাদের দল কখনো তাদের আর দলে ফিরতে দেবে না,’ বলেন তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
সৌজন্যে: দ্য ডেইলি স্টার