
মেঘলা নিউজ ডেস্ক: দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো প্রস্তুতি রাখতে নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদে অংশগ্রহণ করে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার আধুনিক নৌ ও বিমান বাহিনী গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
“এটা আপনাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। ভৌগলিক সীমার দিক থেকে অল্প জায়গা। এই সমস্ত মানুষগুলোর মৌলিক চাহিদাগুলো আমাকে পূরণ করতে হবে। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
“কিন্তু বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে বর্তমান বিশ্ব। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন আমরা চলতে পারি, সেই প্রস্তুতিও আমাদের থাকতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ২০১৮ সালে সরকার নতুন করে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রনয়ন করে, যা মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।
একটি যুগোপযোগী সশস্ত্র বহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সেটা ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকেই। আর এর বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরই পররাষ্ট্রনীতি- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। আমি এইটুকু বলতে পারি যে আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রতিটি দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।
“দেশের সার্বিক উন্নয়নে যার কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা নেওয়া দরকার বা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী যারা হবে, সকলের সাথে একটা ভালো সদ্ভাব রেখে, ভালো একটা সম্পর্ক রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কারণ শান্তি ছাড়া কোনো দেশের উন্নতি করা সম্ভব না। যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে। আমরা ধ্বংসের পথে যেতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে…বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার সব রকম প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে।
“সেজন্য আমাদের সব সময় প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামাদি… আমি মনে করি আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে, তার মধ্য দিয়েই আমাদেরকে সেইভাবে প্রশিক্ষণও অব্যাহত রাখতে হবে। আবার আমাদের সব ধরনের প্রয়োজন যাতে মেটে, তার ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। সেটাই আমরা সব সময় চাই।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন কষ্ট না পায়, ব্যবসা বাণিজ্যের যেন ক্ষতি না হয় বা উৎপাদন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার যে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন সরকারপ্রধান।
মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু চলমান আছি। আমাদের উন্নয়নের ধারাটাকে আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি, কারণ আমাদের এটাই লক্ষ্য যে আমাদের দেশ উন্নত হবে।”
নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদের সদস্যের সামনে তিনি বলেন, “ সবাইকে আমি এইটুকু জানাতে চাই যে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। শুধু শাসক হিসেবে না, আমি বাংলাদেশের মানুষের সেবক। নিজেকে আমি সেই সেবক মনে করি। জনগণের সেবা করা, জনগণের কল্যাণ করাটাকেই আমি আমার সব থেকে বড় কাজ বলে আমি মনে করি।”
সেই ব্রত নিয়েই কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা সব সময় কামনা করি। রাষ্ট্র পরিচালনায় যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই আমি মনে করি যে আপনারা এই দেশের মানুষের পাশে থাকবেন, মানুষের যেভাবে সেবা করে যাচ্ছেন, সেভাবেই সেবা করে যাবেন, সেটাই আমি চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্বিত। আমাদের নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী নিয়ে গর্বিত। এবং আমরা মনে করি, ভবিষ্যত আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দক্ষ যারা, তারা প্রমোশন পেয়ে প্রত্যেকটা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ চলবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে চলবে। এবং বাংলাদেশ হবে ভবিষ্যত উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।”
নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রশংসা করে সরকার প্রধান অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী শুধু আজকে দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ, পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। তাদের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মন ও মর্যাদা, যা বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও উজ্জ্বল করেছে।”
বর্তমানে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নৌ ও বিমান বাহিনীতে ‘টেবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারাটিভ ইভালুয়েশন’ (ট্রেস) এর মতো আধুনিক পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী পর্ষদের সদস্যদের বলেন, এর ভিত্তিতেই যেন তারা ‘জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে’ আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন।
“আবার পাশপাশি আমি এটাও বলব, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে অনেকে কর্তব্য পালনে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। তারাও যেন অবহেলিত না হয়। সেদিকটাও আপনারা বিবেচনা করবেন।”
শেখ হাসিন বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা আপনাদের জ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ভবিষ্যত আমাদের নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী যেন আরো দক্ষতার সাথে পরিচালিত হতে পারে, আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে, প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে সেইভাবেই আপনারা আপনাদের ভবিষ্যত যারা নেতৃত্বে আসবে তাদেরকে ধীরে ধীরে তৈরি করবেন এবং তাদেরকে নির্বাচিত করবেন।
ঢাকা সেনানিবাসের নৌ ও বিমান বাহিনী সদর দপ্তরে এই নির্বাচনী পর্ষদের আয়োজনে দুই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন