
মেঘলা নিউজ ডেস্ক: বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ২২ বছরের সম্পর্কে ইতি টেনেছে খেলাফত মজলিস। শুক্রবার বিকালে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন।
এর আগে দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে খেলাফত মজলিস। বৈঠকে প্রায় দুই শতাধিক সদস্য অংশ নেন।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি। কিছুদিন পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে যায়। পরে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চার দলের সঙ্গে নতুন আরও ১২টি দল যোগ দিলে জোটে দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮টি। এরপর জোটের পরিধি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দলে। পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি, ন্যাপ ও এনডিপি ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও একই নামে এসব দলের একাংশকে জোটে রেখে দেয় বিএনপি। জোট ছেড়ে যায় আন্দালিভ রহমান পার্থের বিজেপিও। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্কের ইতি টানে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এবার ২০ দলের সঙ্গে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিল খেলাফতে মজলিস।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খেলাফতে মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির প্রয়োজনে সদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে খেলাফত মজলিস বিশ্বাসী। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশ, জাতি, ইসলাম ও জনগণের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। খেলাফত মজলিস মনে করে, এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন-পালন করার অধিকার আছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত।
খেলাফতে মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের শুরার অধিবেশনে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, পরবর্তী সিদ্ধান্তের পূর্ব পর্যন্ত খেলাফত মজলিস জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সে অনুযায়ী দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ বছর যাবত আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকরও করা হয়। এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ২০১৯ সালের মজলিসে শূরায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলাফত মজলিস আজকের মজলিসে শূরার অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে খেলাফত মজলিস একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সকল রাজনৈতিক জোটের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।