সিলেটে মা-ছেলের প্রতারণার ফাঁদে দিশেহারা এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১ | আপডেট: ৬:০৪:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটে মা ও ছেলের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী। প্রতারক মা-ছেলে প্রবাসীর বাসা-বাড়ি দখলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাছাড়া প্রবাসীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ছাড়াও মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে যাচ্ছে। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন ওই পরিবারের সদস্যরা।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) বেলা দুইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর বড় ভাই নগরের চৌকিদেখি ১ নং রোডের রংধনু ৫৩ বাসার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েছ আহমদ। প্রতারকচক্রের হয়রানীতে তার ভাই ভুক্তভোগী দিলওয়ার আহমদ যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কয়েছ আহমদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছি। ১৯৯১ সালে আমার ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী দিলওয়ার আহমদের সাথে দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর এলাকার আবদুস সোবহানের মেয়ে শাহনাজ বেগম রিনির বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা জানতে পারি রিনি পরকীয়ায় জড়িত। তখন তিনি গর্ভবতী বলেও খবর আসে। এ ঘটনায় আমার ভাই ও আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। এক পর্যায়ে বিয়ের ৪ মাসের মাথায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে হলফনামা সম্পাদনের মাধ্যমে আমার ভাই স্ত্রী শাহনাজ বেগম রিনিকে তালাক প্রদান করে।

তিনি বলেন, তালাকপ্রাপ্তির পর রিনি তার বাবার বাড়িতে চলে যান এবং সেখানে এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করেন। শাহনাজ বেগম রিনির পিতৃপরিচয়হীন ওই পুত্রসন্তানের নাম রাখেন জামিল আহমদ। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমার ভাই ১৯৯৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হলফনামা সম্পাদনক্রমে জামিল আহমদ দিলওয়ারের ঔরসজাত সন্তান নয় এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধীকারী নন মর্মে বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ঘোষণা প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেরনে কয়েস আরও বলেন, তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর শাহনাজ বেগম দক্ষিন সুরমার উলালমহল গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে লইলু মিয়ার সাথে ২য় বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২য় বিবাহের পর রিনি বেগমের স্বামী মারা গেলে ২০০৭ সালে ফের তিনি পিতৃপরিচয়হীন অসহায় ছেলেসহ আমার স্মরনাপন্ন হন। নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে আমি আমার বাসা নগরীর রংধনু ৫৩, রোড নং ১, চৌকিদেখি বাসা তদারকির দায়িত্ব তুলে দেই এবং লেখাপড়ার ব্যয়ভার গ্রহণ করি। এরপর আমি ফের যুক্তরাজ্যে চলে যাই। আমার বাসায় থেকেই জামিল এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ১০ জুন আমি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আমার ঘরের দামি দামি ফার্নিচারসহ জিনিসপত্র দেখতে না পেয়ে জামিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে আমাকে উল্টো হুমকি দেয় এবং আমার নামে মামলা করবে বলে জানায়।

এ ঘটনাায় আমি দেশে ফেরার ৬ দিনের মাথায় সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় একটি ডায়েরি (নং ৭৯০) করি। কিন্তু এর আগে আমি যুক্তরাজ্য থাকাকালের জামিল পরিকল্পিতভাবে আমাকে আসামী করে ২০২০ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদনে অসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যার স্মারক নং পিবিআই/সিলেট জেলা/ ১১৪৮, তাং-১৬.০৬.২০২০ ইং। এই প্রতিবেদনে জামিল আহমদ নারাজী প্রদান করলে সিআইডি, সিলেট জোন ১৫.০৯.২০২১ ইং ১২১১/২ (১)তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলক্রমে ঘটনার সত্যতা পান নাই মর্মে উল্লেখ করেন।

কয়েস আরও বলেন, এ ঘটনার পর প্রতারক জামিল আমাদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা নৈখাইস্থ এলাকায় নিজেকে দিলওয়ার আহমদের ছেলে বলে পরিচয় প্রদান করতে থাকে। তাছাড়া জাতীয় পরিচয় পত্রেও পিতার নামের স্থানে দিলওয়ার লিখে সকল কার্যক্রম চালাতে থাকে। আমার ভাই নির্বাচন কমিশন বরাবরে জামিল আহমদ দিলওয়ারের পুত্র নয় মর্মে নাম কর্তনের আবেদন করে। এই ঘটনার সে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে আমার গ্রামের বাড়ির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। কৌশলে আমার গ্রামের বাড়ি নৈখাইস্থ বাসার কেয়ারটেকারের মাধ্যমে সেখানকার একটি কক্ষ ভাড়া হিসেবে ব্যবহার করে। এরপর ধীরে ধীরে ভাড়াটিয়া হিসেবে দুটি কক্ষ ব্যবহার করতে শুরু করে।

বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাকে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিলে সে সংঘবদ্ধভাবে আমার কেয়ারটেকারের উপর হামলা করে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জামিলকে তার মাসহ অন্যত্র চলে যেতে অনুরোধ করলে সে দখল ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনায় সহযোগীতার জন্য পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করি।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে জামিল বাড়ি ছেড়ে গেলেও বাড়ির তিনটি কক্ষ দখল করে নেয় এবং আমার নিকট ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে নিজ শরীরে ব্লেড দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আমার বিরুদ্ধে মোগলা বাজার থানায় মিথ্যে মামলা দায়ের করে।

সংবাদ সম্মেলনে কয়েস বলেন, জামিল আমার বাড়ির সম্পত্তি আত্মসাত করণের জন্য সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। জামিল নিজেকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদের নাম বিক্রি করে বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তার অব্যাহত হুমকি ও ভয়ভীতিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমার ভাই প্রবাসে মানসিক রোগী হয়ে পড়ে আছে। নিজেদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় গড়া সম্পদ ও জীবন রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন
Add Custom Banar 2
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

Medical add