
মেঘলা নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ ২১ মাস ধরে সিলেটে নগরীর শাহজালাল উপশহরের একমাত্র খেলার মাঠ মেলা আয়োজনের জন্য স্টলসহ নানা সরঞ্জাম দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। মাঠটি দখল করে রাখায় এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করতে পারছে না। হাঁটাহাঁটির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত নগরায়নের অংশ হিসেবে শাহজালাল উপশহর প্রকল্পে একটি মাত্র খেলার মাঠ রয়েছে। ওই মাঠে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে এ মেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা আর হয়নি। যদিও শুরু থেকেই খেলার মাঠ দখল করে রাখার বিরোধিতা করে আসছিলেন এলাকাবাসী। তারপরও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মেলার সরঞ্জাম দিয়ে মাসের পর মাস মাঠ দখল করে রাখা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, খেলার মাঠজুড়ে মেলার শতাধিক স্টলসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফোয়ারাসহ চিত্তবিনোদনের জন্য মাঠের বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। টিনের পাশাপাশি কোথাও ইট-সিমেন্ট দিয়েও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
উপশহরের ওই খেলার মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করতেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল দলের খেলোয়াড় সৈয়দ নাঈম। তিনি বলেন, এই মাঠে সবসময় অনুশীলন করেছি। অনেকদিন ধরে মাঠ দখল থাকায় অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছি না। নিজেকে ফিট রাখতে তাই জিমে যাওয়া শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, অনুশীলনের জন্য এখন দূরে যেতে হয়।
বিসিকের মাসব্যাপী মেলার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস)। আর মেলায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রয়েছে অতীতে সিলেটে বিভিন্ন সময়ে মেলা আয়োজনে আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন অ্যান্ড জামদানি সোসাইটি।
এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এমএ মঈন খান বাবলু স্থানীয়ভাবে ‘মেলা বাবলু’ নামে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেলায় জুয়াসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে বাবলু দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসাবশত তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। তিনি বলেন, সিলেট চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি মেনে অতীতে মেলার আয়োজন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান শুধু মেলার মাঠের অংশ দেখাশোনা করেন জানিয়ে বলেন, নগরীতে মাইকিং করে মেলার লটারির টিকিট বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।
মাঠের কাছেই সিলেট মহানগর পুলিশের অস্থায়ী সদর দপ্তর ও কমিশনারের কার্যালয় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক এলাকাবাসী বলেন, বিসিকের নামে মেলা হলেও মূলত গ্রাসরুটস ও ‘মেলা বাবলু’ সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছেন। তারা দাবি করেন, স্থানীয় কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম মেলা আয়োজনের প্রতিবাদ করেছিলেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।
মেলা বন্ধের জন্য শাহজালাল উপশহর এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন শাহজালাল উপশহর একাডেমির সভাপতি এমএ ওয়াদুদ। গত ২২ সেপ্টেম্বর এক রুলে ৩০ দিনের মধ্যে মেলার সরঞ্জাম অপসারণে সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্থানীয় ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ অবস্থায় ২৩ অক্টোবর মেলার উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করে প্রচার শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মেলার উদ্বোধন করবেন বলে মাঠে ব্যানার টানিয়ে রাখেন সংশ্নিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে মঈন খান বাবলু বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সময় দিতে পারেননি বলে মেলার উদ্বোধন করা যায়নি। আশা করছি, দ্রুত মেলা শুরু হবে। আদালতের রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ওপর সুপ্রিম কোর্ট ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।
বিসিক সিলেট জেলা কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) সুহেল হাওলাদার বলেন, করোনাসহ নানা কারণে সময়মতো মেলা করা সম্ভব হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে মেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।