স্বাক্ষী দেয়ায় অপরাধে(?) ছাতকে যুবককে কুপিয়ে আহত

প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২২ | আপডেট: ৬:২১:অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২২

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার সংলগ্ন জালিয়া ছাতারপই ‘পাগনা বড় বিল’ জলমহাল সাব-লিজ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে তদন্তকালে স্বাক্ষী দেয়ার অপরাধে(?) ইজারাদারের ভাড়াটে ও পোষ্য গুন্ডাদের হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছেন স্থানীয় সাদারাই গ্রামের হাফিজ খান (৪৫) নামক এক যুবক।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় জাউয়াবাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে কুপিয়ে তাকে আহত করা হয়।সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাফিজ খান পায়ে, মাথায়, পিঠে ও হাতে মারাত্মক কাটাজখম হন। আহতের শোর-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তার অবস্থা আশংকাজনক।

বর্তমানে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার বিপরীতে কোন মামলা হয়নি। ভিকটিমের পরিবার জানিয়েছে, আহত হাফিজ খানের অবস্থা আশংকাজনক থাকায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। তবে পুলিশকে অবগত করা হয়েছে এবং আজকের মধ্যেই এজাহার দাখিল করা হবে।

স্থানীয় সুত্র ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সাল মেয়াদে ‘পাগনা বড় বিল’ জলমহাল ইজারা নেন সোনারতরী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-এর সভাপতি মিরাশ আলী ও স্থানীয় জালিয়া গ্রামের লুৎফুর রহমান নাম। কিন্তু আর্থিক অপ্রতুলতার কারণে মিরাশ আলী-লুৎফুর রহমানরা সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৯ লংঘন এবং শর্তভঙ্গ করে স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোজাক্কির আহমদের নিকট জলমহাল সাব-লিজ দেন।

সাব-লিজ পেয়ে মোজাক্কির আহমদ সরল বিশ্বাসে জলমহালের উন্নয়ন ও ব্যবসার প্রসারে তথায় প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পর চলতি বছর যখন জলমহালের উৎপাদিত মৎস্য বিক্রির সময় হয়, তখন অর্থলোভী মিরাশ আলী-লুৎফুর রহমান যোগসাজশ করে মোজাক্কির আহমদকে বিনিয়োগ ও লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে পুরো জলমহালটি অন্যত্র বিক্রি করে দেয়ার পায়তারা করতে থাকেন।

ঘটনা টের পেয়ে মোজাক্কির আহমদ দুর্নীতি, শর্তভঙ্গ এবং অর্থ আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে মিরাশ আলী ও লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে দরখাস্ত পেশ করেন। দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ঘটনা সুষ্টু তদন্তসাপেক্ষ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ছাতকের ইউএনওকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী ইউএনও তদন্তের জন্য দুই দফায় গত ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে ডেকে এবং স্থানীয় মুরব্বিয়ান ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। তদন্ত চলাকালে মোজাক্কির আহমদের পক্ষে এলাকার মুরব্বিয়ানদের অনুরোধে জাউয়াবাজার ইউনিয়নের সাদারাই গ্রামের মৃত বাজুরী খানের ছেলে হাফিজ খানও গিয়েছিলেন।

উপস্থিত এলাকার মুরব্বিয়ানদের সাথে তিনিও সাক্ষ্য দেন। এত মিরাশ আলী ও লুৎফুর রহমানরা নিরীহ হাফিজের উপর ক্ষিপ্ত হন। এর জের ধরে মিরাশ আলীদের পোষ্য ও ভাড়াটে গুন্ডাদের লেলিয়ে দেয়া হয় হাফিজের বিরুদ্ধে।

সুযোগ বুঝে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পাগনা বড় বিল এলাকায় পৌছুলে মিরাশ আলীদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও কাঠের রুল নিয়ে হাফিজ খানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপোরি কুপিয়ে হাফিজ খানকে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। হাফিজ খানের ভাষ্য অনুযায়ী মিরাশ আলীর নির্দেশে এই ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলায় অংশ ছিল সাদারাই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সুরুক মিয়া (৪২), সুনু মিয়া (৪৫), নুনু মিয়া (৩৩), ইরণ মিয়া (৩০), মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে জিতু মিয়া (৪৫), পাগনার পাড় গ্রামের মৃত জমশিদ আলীর ছেলে রূপন মিয়া (৩৫), রুবেল মিয়া (৩০) ও রজব আলীর ছেলে মিলন মিয়া (৩৫)।

হামলার মুখে তিনি ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মিরাশ আলী ও লুৎফুর রহমানরা গত ৬ সেপ্টেম্বর পাগনা বড় বিল জলমহাল জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে মোজাক্কির আহমদসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি এজাহার পেশ করেন। ওসির নির্দেশে জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাব-ইন্সপেক্টর সুজন শ্যাম এজাহারে বর্ণিত বিষয় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাননি মর্মে গত ২১ সেপ্টেম্বর থানায় প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ফলে মোজাক্কিরদের বিরুদ্ধে মামলা করতেও ব্যর্থ হন প্রতিপক্ষ। এরপরই ২৭ সেপ্টেম্বর ইউএনও কার্যালয়ে মোজাক্কিরের দরখাস্তের দ্বিতীয় পর্যায়ের তদন্ত ছিল। এদিন সমস্ত এলাকাবাসী একবাক্যে মোজাক্কির অর্থাৎ সত্যের পক্ষে স্বাক্ষ্য দেন।

এতে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন মিরাশ আলী ও লুৎফুর রহমান গংরা। এর জের ধরেই নিরীহ হাফিজ খানের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে জাউয়াবাজার ও ভাতগাঁও ইউনিয়নের মুরব্বিয়ান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ছাতক থানার ওসি জানান, এ রকম একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি। কিন্তু এখনও কেউ এজাহার নিয়ে আসেনি। এজাহার আসলে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিজ্ঞাপন
Add Custom Banar 2
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

Medical add