
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউপির হকিয়ারচর গ্রামের প্রায় শতবছরের প্রাচীন জামে মসজিদের মালিকানাধীন প্রায় দেড় কেদার ভূমি আত্মসাতের চেষ্টা করছে একটি চক্র। ওই ভূমিখেকো চক্রটি গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা দখল করে নিরীহ মুসল্লি ও স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এমনকি মসজিদের ইমামকে পর্যন্ত মারধর করেছে।’
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে হকিয়ারচর পঞ্চায়েত কমিটি ও হকিয়ারচর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হকিয়ারচর জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি নুর মিয়া জানান লালাবাজার ইউনিয়নের হকিয়ারচর জামে মসজিদ ৮২ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রামের মো. হাশিমসহ অন্যরা মসজিদের জন্য ভূমি দান করলে প্রায় ১৫ শতক জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মূল মসজিদ ঘরের পাশ^বর্তী লালাবাজার ইউনিয়নের রসুলনগর মৌজার ১৫৭ নং জে.এল স্থিত ২৩১ নং খতিয়ান ও ৮২/১ ডিপি খতিয়ানের অর্ন্তগত ২১৬৬, ২১৬৮, ২১৬৯, ২১৭০, ২১৭১,২১৭২, ২১৭৩,২১৭৪, ২১৭৮, ২১৭৯,২১৮০ ও ২১৮১ নং দাগের ভূমি রায়তি সূত্রে মালিকানা দাবি করে হকিয়ারচর গ্রামের রকিব আলী ওরফে রফিক মিয়া গং নিজেদের নামে ১৯৫৬ সনে রেকর্ড করিয়ে নেয়।
এই ভুল রেকর্ডের বিরুদ্ধে প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ হাশিমের উত্তরাধিকারীগণ ১৯৫৮ সালে স্বত্ব মোকদ্দমা (নং- ৩৮৬/১৯৫৮) দাখিল করলে আদালত মোহাম্মদ হাশিমের উত্তরাধীকারীগণের পক্ষে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে রায়তী সূত্রে মালিক দাবীকারী রকিব আলী ও আব্দুল মনাফ গং আপীল করলে তা খারিজ হয় এবং তারা রিভিশন করলেও আদালত তা খারিজ করে মো. হাশিমের উত্তরাধিকারীগণের মালিকানা বহাল রেখে নি¤œ আদালতের প্রদত্ত রায় বহাল রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলায় হেরে গিয়ে রকিব আলী ও আব্দুল মনাফ গং উপরোক্ত দাগসমূহের দেড় কেদার ভূমি হকিয়ারচর জামে মসজিদে দান করে দিতে চাইলে গ্রামবাসী তাদের দান গ্রহণ করেননি। দক্ষিণ সুরমার মুুরুব্বীদের মধ্যস্ততায় জমির প্রকৃত মালিক মো. হাশিমের উত্তরাধিকারীগণ ও মামলায় পরাজিত পক্ষ রকিব আলী ওরফে রফিক মিয়া গং উভয় পক্ষের সমন্বয়ে মসজিদের অনুকূলে একটি দানপত্র দলিল সম্পাদন করে নেন।
এরপর থেকেই উপরোক্ত দাগের ভূমিতে মসজিদের নিরঙ্কুশ দখল বহাল রয়েছে। দানকৃত ভূমিতে মসজিদের পুকুর অবস্থিত এবং মসজিদের মালিকাধীন উক্ত দাগসমূহের উপর দিয়ে আনুমানিক ৮ ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এই রাস্তা দিয়ে হকিয়ারচর গ্রামের পশ্চিম অংশের লোকজন ঈদগায় যাতায়াত করেন এবং গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। চলমান জরিপেও রাস্তাটি জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানে রেকর্ডভূক্ত হয়েছে।
সম্প্রতি রকিব আলী ওরফে রফিক মিয়ার ছেলে শাহেল আহমদ মসজিদের মালিকানাধীন এই রাস্তাটি তাদের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা দাবী করে রাস্তাটি চালাচ্ছে। ভূমিখেকো শাহেলের চাচাতো ভাই আব্দুল হান্নান নিরীহ গ্রামবাসীকে বিবাদী করে সিলেটের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। ইতোপূর্বে, শাহেল আহমদের ভাই শাহীন আহমদ বাদী সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করলেও মামলার বিষয়বস্তু মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি নথিজাত করেন আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ অক্টোবর দুপুরে ভূমিখেকো শাহেল আহমদের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জোর পূর্বক মসজিদের ইমামের কক্ষে প্রবেশ করে মসজিদের ইমামকে মারধর করে জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দিয়ে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শাহেল আহমদসহ অন্য দুর্বৃত্তরা মসজিদের মিনারের খুঁটি ভেঙে ফেলে ও মসজিদের সামনে লাগানো বিভিন্ন ফসলি গাছপালা কেটে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি করে।
এ ঘটনায় হকিয়ারচর গ্রামে মৃত রফিক মিয়ার ছেলে শাহেল আহমদ (৩৮) ও শাহিন আহমদ (৪২), গ্রামের আব্দুল হান্নান (৪৫), আব্দুল কাদির (৩৫), রবিন (২৫), আব্দুল আহাদ (৪৫), আব্দুল কালাম (৫৫), সামাদ (২৭), শিপলু (২৬), দেলোয়ার হোসেন (২৮), সুজন আহমদ (২২) সহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে গ্রামবাসীর পক্ষে হকিয়ারচর জামে মসজিদের মোতায়াল্লি হকিয়ারচর গ্রামের নূর মিয়া দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ২৮৭/২০২১।
সংবাদ সম্মেলনে নুর মিয়া দাবি করেন গ্রামবাসীর পক্ষে দায়ের মামলায় জামিন নিয়ে ভূমিখেকো শাহেল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ২৮ অক্টোবর আছরের নামাজের পর সে প্রকাশ্যে মসজিদ কমিটির মোতায়াল্লি নুর মিয়াকে প্রাণে হত্যার হুমকী দিয়েছে।
মসজিদের ভূমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে সে সন্ত্রাসী ভাড়া করেছে। শাহেল সশস্ত্র বহিরাগত লোকজন নিয়ে গ্রামে মহড়া দিচ্ছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে ভূমিখেকো শাহেল ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান গ্রামবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হকিয়ারচর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হান্নান, গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি হাজী সইদুল্লাহ, আফিদ আলী, আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান, হাজী আব্দুল সেলিম, হাজী সাইস্তা মিয়া, গোলাম আম্বিয়া ফজলু, আব্দুল কাইয়ুম, ফয়েজ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হক, খালেদ হোসেন, মুক্তার আহমদ, সাহেদ আহমদ প্রমুখ।